ভারতের ভূগোল - নদী, পর্বত, মরুভূমি, বনভূমি | Geography of India - Rivers, Mountains, Deserts, Forests

ভারতের ভূগোলের গুরুত্বপূর্ণ টপিক – নদী, পর্বত, মরুভূমি ও বনভূমির বিস্তারিত আলোচনা। রেল, ব্যাংক, WBCS, SSC, UPSC সহ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য টপিক।

ভারতের ভূগোল (নদী, পর্বত, মরুভূমি, বনভূমি) 

ভারতের ভূগোল (নদী, পর্বত, মরুভূমি, বনভূমি) ভারতের ভূগোল (নদী, পর্বত, মরুভূমি, বনভূমি) | Geography of India (Rivers, Mountains, Deserts, Forests)

✅ ১. ভারতের নদী ব্যবস্থা 

ভারত নদ-নদীর দেশ। দেশের ভূগোল, কৃষি, জলবায়ু এবং সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এই নদীগুলি দুটি প্রধান শ্রেণিতে বিভক্ত — হিমালয়নদী এবং প্রায়দ্বীপীয় নদী।(Peninsular Rivers) 

হিমালয়নদী যেমন গঙ্গা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র বরফ গলে বা হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়, ফলে সারা বছর জলবাহী থাকে এবং এই নদীগুলি বিস্তৃত অববাহিকা তৈরি করে। গঙ্গা নদী ভারতের দীর্ঘতম এবং পবিত্রতম নদী, যা গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশে যায়। ব্রহ্মপুত্র তিব্বতে সাংপো নামে পরিচিত এবং অসমে প্রবেশ করে শক্তিশালী প্রবাহ নিয়ে চলতে থাকে। 

অন্যদিকে, প্রায়দ্বীপীয় নদী নদীগুলি যেমন গোদাবরী, কৃষ্ণা, নর্মদা, তাপ্তি প্রায়দ্বীপীয় মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়। এদের প্রবাহ তুলনায় ছোট এবং বর্ষার জলে নির্ভরশীল। নর্মদা ও তাপ্তি পশ্চিমমুখী নদী, যেগুলি আরব সাগরে পতিত হয়, যা ভারতের নদী ব্যবস্থার এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ভারতের নদীগুলি কৃষিকাজ, পানীয় জল, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং নৌপরিবহণে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন নদী অববাহিকা যেমন গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা, গোদাবরী অববাহিকা ভারতের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

 ✅ ১. ভারতের নদী ব্যবস্থা (এক ঝলক) 

ভারতের নদী ব্যবস্থা দুই ভাগে বিভক্ত – হিমালয়নদী ও প্রায়দ্বীপীয় নদী। 

🔶 হিমালয়নদী 

  • উৎস: হিমবাহ বা তুষার গলে 
  • বারোমাস জলবাহী 
  • বড় অববাহিকা তৈরি করে 
  • প্রধান নদী: 
    • গঙ্গা → উৎস: গঙ্গোত্রী হিমবাহ, দৈর্ঘ্য প্রায় ২,৫১০ কিমি। উপনদী: যমুনা, ঘাঘরা, কোসী, গণ্ডক। যেখানে মিশে: বঙ্গোপসাগর। 
    • ব্রহ্মপুত্র → উৎস: মানস সরোবরের কাছে (তিব্বতে সাংপো নামে পরিচিত)। উপনদী: তিস্তা, লোহিত। অসমে প্রবেশ করে। যেখানে মিশে: বঙ্গোপসাগর। 
    • ইন্ডাস (সিন্ধু) → উৎস: মানস সরোবর। উপনদী: ঝেলম, চেনাব, রাভি, বিয়াস, সতলুজ। যেখানে মিশে: আরব সাগর। 

🔶 প্রায়দ্বীপীয় নদী 

  • উৎস: পাহাড়, মালভূমি অঞ্চল 
  • বর্ষার উপর নির্ভরশীল 
  • গ্রীষ্মে অনেক সময় শুকিয়ে যায় 
  • প্রধান নদী: 
  • গোদাবরী → উৎস: নাসিক। দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৪৬৫ কিমি। উপনদী: মঞ্জিরা, প্রাঞ্জিতা। বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। 
  • নর্মদা → উৎস: আমারকণ্টক পাহাড়। আরব সাগরে পতিত হয়। উপনদী: তাওয়া, শের। 
  • তাপ্তি → উৎস: সাতপুরা পাহাড়। আরব সাগরে পতিত হয়। উপনদী: পূর্ণা, গির্না। 
  • কৃষ্ণা → উৎস: মহাবলেশ্বর। উপনদী: ভীমা, মুসী। বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। 
  • কাভেরী → উৎস: ব্রহ্মগিরি পাহাড়। উপনদী: হেমাবতী, ভবানী। বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। 

✅ নদীগুলি সেচ, বিদ্যুৎ, নৌপরিবহণ এবং পানীয় জলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ যেমন হিরাকুণ্ড (মহানদী), ভাকড়া-নাঙ্গল (সতলুজ), নাগার্জুন সাগর (কৃষ্ণা নদী) ভারতের নদীগুলির উপর নির্মিত। 

✅ ২. ভারতের পর্বত 

ভারত বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতির দেশ, যার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন পর্বতশ্রেণি। দেশের উত্তর সীমান্তে বিস্তৃত হিমালয় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালা, যা প্রায় ২৪০০ কিমি দীর্ঘ এবং ২০০-৪০০ কিমি চওড়া। 

হিমালয় তিনটি অংশে বিভক্ত — হিমাদ্রি (সর্বোচ্চ শৃঙ্গসমূহ নিয়ে গঠিত), হিমাচল (মধ্য হিমালয়) এবং শিবালিক (নিম্ন হিমালয়)। হিমালয়ে ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮,৫৯৮ মিটার), যা সিকিম ও নেপালের সীমান্তে অবস্থিত। হিমালয় অঞ্চল ভারতের জলবায়ু, নদীর উৎস এবং প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

ভারতের পশ্চিম অংশে রয়েছে প্রাচীন আরাবল্লি পর্বতশ্রেণি, যা রাজস্থানে বিস্তৃত এবং গুরু শিখর এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। মধ্য ভারতের বিন্ধ্যাচল ও সাতপুরা পর্বতমালা উত্তর ও দক্ষিণ ভারতকে প্রাকৃতিকভাবে বিভক্ত করে। দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পাহাড়ি অঞ্চলগুলি পশ্চিম ও পূর্ব উপকূল বরাবর বিস্তৃত। 

পশ্চিমঘাট জৈববৈচিত্র্যে ভরপুর এবং UNESCO World Heritage Site হিসাবে স্বীকৃত। ভারতের পর্বতশ্রেণিগুলি প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ, নদীর উৎস এবং জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  

 ✅ ২. ভারতের পর্বত (এক ঝলক) 

ভারত বিভিন্ন পর্বতশ্রেণিতে সমৃদ্ধ। 

🔶 হিমালয় পর্বতমালা 

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি। 

তিন ভাগ: 

  • হিমাদ্রি (Great Himalaya) → সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ নিয়ে গঠিত। 
  • কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮,৫৯৮ মিটার) → ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, সিকিম-নেপাল সীমান্তে। 
  • নন্দা দেবী (৭,৮১৭ মিটার) → উত্তরাখণ্ডে। 
  • কমেট (কমেট পিক) → লাদাখ অঞ্চলে। 
  • হিমাচল (Middle Himalaya) → উপত্যকা ও হিল স্টেশন নিয়ে গঠিত যেমন শিমলা, দার্জিলিং। 
  • শিবালিক (Outer Himalaya) → নিম্ন পর্বত, উচ্চতা প্রায় ৯০০-১,২০০ মিটার। 

🔶 আরাবল্লি পর্বতশ্রেণি 

  • ভারতের প্রাচীনতম পর্বত। 
  • গুরু শিখর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ (১,৭২২ মিটার)। 
  • রাজস্থানে অবস্থিত। 

🔶 বিন্ধ্যাচল ও সাতপুরা 

  • মধ্যভারতে বিস্তৃত। 
  • বিন্ধ্যাচল উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের প্রাকৃতিক বিভাজক। 
  • সাতপুরা পশ্চিমে নর্মদা ও তাপ্তির মাঝে বিস্তৃত। 

🔶 পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট 

  • পশ্চিমঘাট UNESCO World Heritage Site। 
  • পশ্চিমঘাটের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আনাইমুদি (২,৬৯৫ মিটার)। 
  • পূর্বঘাটের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অরকু পাহাড় (১,৪৫০ মিটার)। 

✅ ভারতের পর্বত অঞ্চল প্রাণী ও উদ্ভিদের বিশাল বৈচিত্র্য ধারণ করে। হিমালয়ে রয়েছে তুষার চিতা, লাল পান্ডা, পাইন, রডোডেনড্রন গাছ। 

✅ ৩. ভারতের মরুভূমি 

ভারতের প্রধান মরুভূমি হলো থার মরুভূমি, যাকে গ্রেট ইন্ডিয়ান ডেজার্টও বলা হয়। এটি রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের কিছু অংশে বিস্তৃত। থার মরুভূমিতে বালিয়াড়ি, শুষ্ক আবহাওয়া, কম বৃষ্টিপাত এবং অতিরিক্ত গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা লক্ষ্য করা যায়। এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি হলো জোধপুর, বিকানের, জয়সলমীর। থার মরুভূমির জীবজগতও বিশেষভাবে অভিযোজিত — ক্যাকটাস, বালি-সাপ, উট ইত্যাদি এখানে দেখা যায়। 

ভারতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মরুভূমি হলো লাদাখের শীতল মরুভূমি। এটি জম্মু ও কাশ্মীরের (বর্তমান লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল) অংশ, যেখানে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত কম এবং শীতকালে তাপমাত্রা -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়। লাদাখের প্রাকৃতিক দৃশ্য তুষারঢাকা পাহাড়, শুষ্ক সমতলভূমি এবং স্বচ্ছ হ্রদ নিয়ে গঠিত। ভারতের মরুভূমি অঞ্চল অর্থনীতি, খনিজ সম্পদ, পর্যটন এবং সামরিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  

 ✅ ৩. ভারতের মরুভূমি (এক ঝলক) 

ভারতের দুটি গুরুত্বপূর্ণ মরুভূমি অঞ্চল রয়েছে। 

 🔶 থার মরুভূমি 

  • ভারতের বৃহত্তম মরুভূমি। 
  • রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানা, পাঞ্জাবের কিছু অংশে বিস্তৃত। 
  • বার্ষিক বৃষ্টি মাত্র ১০০-৫০৫ মিমি। 
  • প্রাণী: উট (desert ship), গজেলা, নীলগাই। 
  • উদ্ভিদ: কাঁটা গাছ, বাবলা, ক্যাকটাস। 
  • বড় শহর: জয়সলমীর, বিকানের, জোধপুর। 

🔶 লাদাখ মরুভূমি 

  • শীতল মরুভূমি। 
  • জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলে। 
  • গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ২০°C, শীতে -৩০°C বা তার নিচে। 
  • বৃষ্টি মাত্র ১০০ মিমি এর নিচে। 
  • প্রাকৃতিক দৃশ্য: প্যাঙ্গং লেক, নুব্রা ভ্যালি। 
  • প্রাণী: ইয়াক, তিব্বতি নেকড়ে, স্নো লেপার্ড। 

✅ থার মরুভূমি খনিজ সম্পদ যেমন জিপসাম, লিগনাইট, চুনাপাথরের জন্য বিখ্যাত। লাদাখ পর্যটন, সামরিক কৌশলগত গুরুত্ব এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। 

✅ ৪. ভারতের বন 

ভারতের বনভূমি দেশের জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের বনভাগ প্রায় ২৪.৬২% (FSI রিপোর্ট ২০২১ অনুযায়ী)। ভারতের বনভূমি বিভিন্ন ধরনের — উষ্ণ-বৃষ্টি অরণ্য (Tropical Rain Forest), পত্রঝরা অরণ্য (Deciduous Forest), শীতল অরণ্য (Temperate Forest), কাঁটাঝোপ বন (Thorn Forest), এবং ম্যানগ্রোভ অরণ্য। 

পশ্চিমঘাট, উত্তর-পূর্ব ভারত ও আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে উষ্ণ-বৃষ্টি অরণ্য রয়েছে, যেখানে মহোগনি, সেগুন, সল প্রভৃতি বৃক্ষ জন্মে। মধ্যভারত, ছত্তিশগড় ও ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে পত্রঝরা অরণ্য দেখা যায়। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে শীতল অরণ্য দেখা যায়, যেখানে দেবদারু, পাইন, চিরবৃক্ষ জন্মায়। সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল। ভারতের মধ্যে সর্বাধিক বনভূমি রয়েছে মধ্যপ্রদেশে। বনভূমি শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষাই নয়, স্থানীয় মানুষের জীবিকা, বনজ সম্পদ, এবং পর্যটনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

 ✅ ৪. ভারতের বন (এক ঝলক) 

ভারতের বনভূমি প্রায় ৮০.৭৩ মিলিয়ন হেক্টর (২৪.৬২% অঞ্চল)। 

 🔶 উষ্ণ-বৃষ্টি অরণ্য (Tropical Evergreen Forest) 

  • অঞ্চল: পশ্চিমঘাট, উত্তর-পূর্ব ভারত, আন্দামান দ্বীপ। 
  • বৃক্ষ: মহোগনি, রোজউড, সেগুন, সাল। 
  • প্রাণী: গৌর, হরিণ, হাতি, ল্যাঙ্গুর। 

🔶 উষ্ণ-পত্রঝরা অরণ্য (Tropical Deciduous Forest) 

  • অঞ্চল: মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড। 
  • বৃক্ষ: শাল, সেগুন, তendu। 
  • প্রাণী: বাঘ, হরিণ, ভালুক। 

🔶 শীতল অরণ্য (Temperate Forest) 

  • অঞ্চল: হিমাচল, উত্তরাখণ্ড। 
  • বৃক্ষ: পাইন, দেবদারু, স্প্রুস। 
  • প্রাণী: তুষার চিতা, লাল পান্ডা। 

🔶 কাঁটাঝোপ বন (Thorn Forest) 

  • অঞ্চল: রাজস্থান, গুজরাট। 
  • বৃক্ষ: বাবলা, কাঁটা গাছ। 
  • প্রাণী: নীলগাই, খরগোশ, গজেলা। 

 🔶 ম্যানগ্রোভ অরণ্য (Mangrove Forest) 

  •  অঞ্চল: সুন্দরবন (পশ্চিমবঙ্গ)। 
  • বৃক্ষ: সুন্দরী গাছ। 
  • প্রাণী: রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কাঁকড়া, কুমির। 

 ✅ সুন্দরবন হলো বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং UNESCO World Heritage Site। ভারতের বনভূমি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি, এবং স্থানীয় মানুষের জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

Post a Comment

I'm pleased to hear from you. Without any hesitation, kindly leave your valuable words in the Comment Box
© BARICK ACADEMY . All rights reserved. Distributed by Pixabin